|| এখন খবর (Bengali: বেঙ্গল নিউজ) is the first 24X7 online news daily portal - dedicated to entire Bengali speaking region. ||

প্রিন্ট করুন

Under The Stair

বিশ্বাস করিনা।
কোনভাবেই বিশ্বাস করিনা।
কখনোই না।
মাহবুবউদ্দিন বিড়বিড় করে এগিয়ে চলেছেন। উনি প্রায় পাগল হতে চলেছেন। আর মনে মনে বিদেশী বায়ারদের মা বাপ তুলে সুন্দর কিছু গালি দিচ্ছেন।আর উঠে চলেছেন সিড়ি বেয়ে।
উনার অফিস একদম ওপরের তলায়। এ বাড়িটা প্রায় পয়ত্রিশ তলা। ঢাকা শহরের সবচে উঁচু বাড়ি। এখন তিনি আছেন পনেরো তলায়। এর আগ পর্যন্ত কখনোই এভাবে তিনি ওঠেননি সিড়ি বেয়ে। কখনো সখনো এক দোতলা উঠেছেন। তাতেই বিশালশরীরধারী মাহবুবউদ্দিনের হাঁপানি উঠেছে। বয়স তো কম হলনা। কিন্তু এখন উনাকে উঠতে হচ্ছে। এবং একান্ত বাধ্য হয়েই।
এই অফিস বাড়িটা উনার। বাড়ির মালিক হিসেবে তিনি অবশ্য বড়ই কুটিল। নইলে কি এত সম্পত্তির মালিক হতে পারতেন? কিন্তু এখন উনার একটাই উদ্দেশ্য। একদম পয়ত্রিশ তলার ছাদে নিজের অফিসে যাওয়া। নিজের অফিস কেন পয়ত্রিশ তলায় করেছিলেন সেটা ভেবে তিনি আরেকবার নিজেকেই গালি দিয়েন। আর বিড়বিড় করতে করতে আরেকধাপ উঠলেন।
এবার তিনি স্পষ্ট শুনতে পেলেন।
একটা টেনিস বল ড্রপ খাচ্ছে।
শব্দটা খুবই পরিচিত। যদিও শুনেছেন অন্তত বিশ বছর আগে। তখন এত শানশওকত হয়নি। হয়নি এত নাম ও। তবে রাগ ছিল এখনকার মতই। যখন যা খুশি করতেন। বাড়ির সামনে একটা বাচ্চা ছেলে খেলত প্রায়ই। বাপ মা তুলে গাল দিলে পালাত। একদিন ঘরের উঠানে খেলতে থাকা বাচ্চাটাকে রাগের মাথায় একটা সসপ্যান দিয়ে বাড়ি মেরে থেতলে দিয়েছিলেন মাথাটা। দরদর করে পড়তে থাকা রক্ত নিয়ে পালিয়েছিল ছেলেটা। আর আসেনি। তিনি শান্তি পেয়েছেন এর পর। এবং বিগত বিশ বছর ধরে। কিন্তু টেনিস বলটা ড্রপ খাচ্ছে। এবং শব্দটা তিনি সহ্য করতে পারেন না। এবং তিনি জানেন এটা কে করছে।
রহমত!
এই শুয়োরের বাচ্চা রহমত!
কই গেলি?
মোমবাতি আনতে এতোক্ষণ লাগে?
খানিক আগেও মেশিনরুম অপারেটর রহমত ছিল সাথে। এখন নেই। তিনি রহমতকে নিয়ে উঠতে শুরু করেছিলেন। তিন তলা আগে রহমত গেছে সতের তলায়। সেখানে টর্চ জাতীয় কিছু পাওয়া যেতে পারে। মোমবাতি ও পাওয়া যেতে পারে। এই চিন্তায় মনিবকে দাঁড় করিয়ে চলে গেছে সে। কিন্তু মাহবুবউদ্দিনের তর সয়নি। তিনি উঠতে শুরু করেছেন পরের মিনিটেই। আর এখন বেশ ভয় পাচ্ছেন।
সার্বক্ষণিক বিদ্যুৎ ব্যবস্থা আছে এই ভবনে। বিশাল এক জেনারেটর ও আছে। কিন্তু আজকে লোডশেডিং বিকেল থেকে। আর মেশিনরুমের বাকি সবাই চলে গেছে ঈদের ছুটিতে। খানিক আগেই নাকি জেনারেটরের তেল ফুরিয়েছে। আর খানিক পড়েই তিনি গাড়ি থামিয়েছেন ভবনের সামনে। এসে দেখেন মৃত্যুপুরীর অন্ধকার। রহমতকে গালাগাল দিতেই সে এসে হাজির। আর এখন সে গেছে মোমবাতি বা টর্চ কিছু একটা খুঁজতে। আর এর মাঝেই বল ড্রপের শব্দ!
বেশ ভয়াবহ।
রাত কম হয়নি।
রাত দুটো।
এত রাতে ভয় পাওয়া স্বাভাবিক। কিন্তু একটা মেইল আসবে। সেটা বাসায় বসেও করা যেত। কিন্তু ডকুমেন্টস গুলো সব অফিসে। কেন সেগুলো অফিসে সেটা নিয়ে আরেকপ্রস্থ মা বাপ তুলে গালাগাল দিয়ে তিনি আবার ওঠা শুরু করেন।
একটা শিস বাজছে।
"কোন হতচ্ছাড়া শিস বাজায়?"
বাজখাই গলায় মাহবুবউদ্দিন সাহেব চিৎকার করেই থেমে গেলেন। ভয়ে উনার বুক গলা শুকিয়ে গেছে। কারণ এই শব্দটা ও উনার বেশ পরিচিত। এমন করেই একদিন মনের ভুলে শিস বাজিয়েছিল রহিমা নামের কাজের মেয়েটা। তিনি রহিমার গায়ে গরম পানি ঢেলে দিয়েছিলেন। আজ প্রায় বছরখানেক পর সেই একই শিসের শব্দ ভেসে আসছে। ওপরের তলায় কেউ একজন আসছে। চপ্পল পায়ে। ছটাছট শব্দ করে।
এটা রহিমাই হবে।
কিন্তু...
সব হ্যালুসিনেশন।
সব।
বিশ্বাস করিনা।
কোনভাবেই বিশ্বাস করিনা।
কখনোই না।
তিনি মনে মনে আউড়ে চলেছেন।
মানুষ মরে গেলে আবার ফেরত আসে কিভাবে? তিনি হত্যা করেছেন। মানুষ মরার পর ফেরত আসার কোন সম্ভাব্যতাই নেই। এটা অসম্ভব। এবং সত্যিই তাই। কিন্তু তিনি নিজের কানকে বিশ্বাস করেন কিভাবে?
কয়েককদম উঠে ল্যান্ডিঙে বসে পড়লেন তিনি।
মুখে ইনহেলার নিয়ে টানতে শুরু করলেন। বেশ হাঁপানির টান বেড়েছে। ভয় পেলে এটা অনেক বেশি বাড়ে। এত বেশি বাড়ে যে তিনি মৃত্যু দেখতে পান। ইদানিং তিনি
বেশি ভয় পাচ্ছেন। এই যেমন গতকাল একবার মনে হল হরিচরণ কে দেখেছেন। পরে মনে হলে মনের ভূল।
হরিচরণ ছিল উনার বন্ধু। এই বিশাল জমিটার মালিক। তিনি হরিচরণকে সুন্দর করে বিষ খাইয়ে মেরেছেন। তারপর এই জায়গাটা দখল করে প্রথম দোতলা বাড়িটা করেছিলেন। আর সেটাই এখন প্রায় পয়ত্রিশ তলা ভবন। ঢাকা শহরের সবচে উঁচু ভবন। আর উনি এটার মালিক। বাংলাদেশের একনম্বর বিজনেস ম্যাগনেট যিনি জানেন না উনার কত টাকা আছে। একটা মেইল আসবে। এর পর তিনি হয়ে যাবেন পৃথিবীর সেরা ধনীদের একজন। এক টা বিশাল কাজের কন্ট্রাক্ট পেতে চলেছেন। এজন্য ভিডিও কনফারেন্স করে কথা বলার দরকার। অন্যসময় হলে ম্যানেজার কে বলতেন। কিন্তু শালা চলে গেছে ঈদের ছুটিতে নিজের বাড়িতে। পুরো অফিস ছুটি দেয়ার পর মোবাইলে টেক্সট আসতেই তিনি ছুটে এসেছেন আবারো।
ঠকঠক শব্দ হচ্ছে।
হয়ত কয়েকতলা ওপরে। এই শব্দটা উনার অনেক বেশিই পরিচিত। হরিচরনের বাবা এভাবে হাঁটতেন। জগদাচরন বেচারা পাগল হয়ে মরেছিল। সেও কি ফিরে এসেছে? আজকে উনাকে অসহায় পেয়ে এভাবে ঘিরে ধরল সবাই?
তিনি অসুস্থ বোধ করছেন।
হাত পা কাঁপছে।
ঘেমে নেয়ে উঠেছেন।
কোটটা খুলে রাখলেন পাশে। কোটের পকেটে একটা লাল এম্পুল আছে। ওটা সিরিঞ্জে ভরে বুকের ওপর পুশ করলে এবারের মত বেঁচে যাবেন। তিনি টের পাচ্ছেন তিনি এই সামান্য কাজটুকু করতে পারছেন না। হাত কাঁপছে। এম্পুলটা হাত থেকে পড়ে ভেঙ্গে গড়িয়ে দিল সাদাটে তরল। তিনি তরলটার দিকে তাকিয়ে কেঁপে উঠলেন। অন্ধকারে কেউ দেখছেনা। তিনি জিভ ঠুকিয়ে তরলটা চাটতে চাইলেন। এবং সিড়িতে পড়ে গেলেন মুহুর্তেই। ল্যান্ডিঙে আসার আগেই নিথর হয়ে গেল উনার শরীরটা। ওপরে আর নিচে তখনো বিভিন্ন শব্দ হয়ে চলেছে নিরন্তর...
.........
"ইন্সপেক্টর - ডেডবডি পোষ্টমর্টেম করতে হবে"
" আমি জানি। কিন্তু আমরা সবাই মনে করেছিলাম তিনি মরবেন না। এবং এখানে আমরা সবাই উপস্থিত ছিলাম।"
" জানি। কিন্তু আইন বলে কথা।"
"আমাদের চালে কি কোন ভুল ছিল?"
"নাহ- সব ঠিক ছিল। শুধু ধারনা করতে পারিনি এত বড় খুনী টা এত দুর্বল হার্ট নিয়েই এতগুলো খুন করেছে..."
বলেই রহমতের পোশাকে থাকা ইনস্পেকটর সাজ্জাদ গাড়িতে উঠলেন। উনি একজন ভয়াবহ খুনিকে ধরতে এসে নিজেই বোকা বনে গেছেন। খুনি যে ভূতে বিশ্বাস করে এটা উনার জানা ছিলোনা। জানলে অন্য কোন উপায় বের করতে পারতেন- ভাবতে ভাবতে গাড়ি ছেড়ে দিল। চলে গেল বিশাল গাড়ি বহর। পেছনে পড়ে রইল সুবিশাল ভবনটা। এখনো কারেন্ট আসেনি। কারণ ইচ্ছে করেই এ বাড়িতে লোডশেডিং ক্রিয়েট করা হয়েছিল। যা পুলিশের অনুমতি ছাড়া আবার ফিরিয়ে দেয়া কারো পক্ষে সম্ভব নয়।।


প্রিয় পাঠক, পোস্টটি পড়ার পর আপনার ভালো-লাগা, মন্দ-লাগা, জিজ্ঞাসা কিংবা পরামর্শ প্রদানের জন্য দয়া করে গঠনমূলক মন্তব্য প্রদান করুন। যা আমাদের কে এগিয়ে চলতে অনেক উৎসাহ-অনুপ্রেরণা জাগাবে। আর প্রাসঙ্গিক যেকোন প্রশ্নের সমাধান পেতে মেইল করুন fassionchannel@gmail.com ঠিকানায় অথবা অধিক জরুরী প্রয়োজনে কল করুন +৯৯০৩১৫০৯৯০ নম্বরে। আপনার একটি মন্তব্যই আমাদের নিকট অনেক মূল্যবান। সাথেই থাকুন বিশ্ববঙ্গের সর্বাধিক পঠিত ব্যক্তিগত বাংলা নিউজের সাথে। ধন্যবাদান্তে, এখন খবর

No comments:

Post a Comment

পেজ টি এতবার দেখা হয়েছে